সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে এ পদ্ধতিতে উত্তর দেওয়ার নিয়মগুলো ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। এবার জেনে নাও এরকম কিছু নিয়ম।
বাংলা ১ম পত্র
মিউ মিউ ডাক শুনে অধ্যাপক ফজলুল হকের ঘুম ভাঙল। তিনি বিছানা ছেড়ে একটু এগিয়ে এসে দেখতে পেলেন, একটি ছোট্ট বিড়ালছানা অত্যন্ত করুণ কণ্ঠে ডেকে চলেছে। তাঁর দয়া হলো; তিনি কাছে গিয়ে বিড়ালছানাটিকে তুলে নিলেন। মাথায় হাত বোলালেন। নিজেই দুধ এনে খেতে দিলেন। তারপর বাসার সবাইকে ডেকে বলে দিলেন, আজ থেকে ও আমাদের স্থায়ী মেহমান, সবাই ওর যত্ন নেবে। কিছুদিন পর বিড়ালছানাটিকে না দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কৃষ্ণা কোথায়? তাঁর গিন্নি বললেন, ওটাকে ফেলে দিয়েছি। বাড়তি খরচ, তা ছাড়া বাড়িঘর নোংরা করে। গিন্নির কথা শুনে তিনি ব্যথিত হলেন, বিড়ালছানাটিকে ফিরে পেতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করলেন।
ক) অতিথি গল্পটির প্রকৃত নাম কী? ১
খ) ‘খাওয়া সম্বন্ধে নির্বিকারচিত্ত’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন? ২
গ) অধ্যাপক ফজলুল হক সাহেবের সঙ্গে গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ) কাহিনিতে ভিন্নতা থাকলেও পাঠকের জন্য উদ্দীপক এবং গল্প উভয়ই অভিন্ন স্বাদ পরিবেশন করেছে। মতামত দাও। ৪
ক ও খ প্রশ্ন দুটি উদ্দীপকের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল না হলেও উদ্দীপকটি পাঠ্যবইয়ের যে গল্পটির ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে সেই গল্প থেকেই করা হয়েছে। সে জন্য ওই গল্পের কাহিনি জানা থাকলে মুখস্থ করে এবং গল্পের ঘটনাবলি বুঝলেই ক ও খ প্রশ্নের উত্তর লেখা সম্ভব। অর্থাৎ উদ্দীপক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। পক্ষান্তরে গ ও ঘ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে উদ্দীপকের সাহায্য নিতে হবে। গ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীকে উদ্দীপক পড়ে বুঝতে হবে তার পাঠ্যবইয়ের কোন বিশেষ ঘটনা, ধারণা, তত্ত্ব, সূত্র, নিয়মনীতি, বিধি পদ্ধতি যাচাই করার জন্য উদ্দীপক গঠন করা হয়েছে। এ অর্থে আলোচ্য উদ্দীপকে পাঠ্যবইয়ের অতিথি গল্পের কোন চরিত্রটির সঙ্গে অধ্যাপক ফজলুল হকের সাদৃশ্য রয়েছে তা চিহ্নিত করে উভয়ের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।
এর উত্তরে বলা যায়—
উদ্দীপকের অধ্যাপক ফজলুল হকের সঙ্গে অতিথি গল্পের কথক তথা লেখকের সাদৃশ্য দেখা যায়। গল্পের লেখক পথ চলতে চলতে সাথি হিসেবে একটি কুকুর পেলেন। ওই কুকুরটির প্রতি তাঁর মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাঁর কর্মচারীরা কুকুরটির যত্ন না নেওয়া, খাবার না দেওয়ার ঘটনা শুনে তিনি ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত হন। একইভাবে উদ্দীপকের অধ্যাপক সাহেব তাঁর গিন্নির মুখ থেকে বিড়ালছানাটিকে ফেলে দিয়েছেন শুনে দারুণভাবে ব্যথিত হন। এভাবে ইতর প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে লেখক ও উদ্দীপকের অধ্যাপক সাহেবের মিল লক্ষ করা যায়।
প্রশ্নের ঘ অংশের উত্তর লেখার জন্য শিক্ষার্থীকে উদ্দীপকটির মধ্য দিয়ে পাঠ্যবইয়ের মূল বিষয়বস্তুতে যেতে হবে এবং পাঠ্যবইয়ের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে নিজস্ব ভাবনা-চিন্তা বা বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আলোচ্য উদ্দীপকে বর্ণিত কাহিনি এবং পাঠ্যবইয়ের গল্পের কাহিনি পাঠকদের জন্য অভিন্ন স্বাদের কি না—এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীর মতামত চাওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে নিম্নরূপে উত্তর লিখে তার মতামত প্রকাশ করতে পারে—
উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের গল্পের কাহিনিতে ভিন্নতা আছে। গল্পের লেখক অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শে হাওয়া পরিবর্তন করতে যান। সেখানে একটি কুকুরের সঙ্গে তাঁর মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি কুকুরটাকে খাবার দিতে বললেও স্বার্থপর কর্মচারীরা তা দেয়নি। বরং ওটার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। গল্পে লেখকের প্রাচুর্যের পরিচয় পাওয়া যায়। বাড়ি ও চাকরবাকর ইত্যাকার ব্যাপারেই সেই পরিচয় তুলে ধরে। অপর দিকে উদ্দীপকে এসবের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। চাকরবাকরের কথা এখানে নেই। অনেক লোকজনের কোনো ইঙ্গিত নেই। নেই কোনো অসুস্থ জনগোষ্ঠীর পরিচয়, যা গল্পে আছে। তবে গল্পের লেখক এবং উদ্দীপকের অধ্যাপক সাহেব, দুজনই যেভাবে দুটো ইতর প্রাণীর সঙ্গে মমত্বের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, পাঠকের কাছে সেটাই মূল উপভোগ্য বিষয় হয়ে দেখা দেয়। তাঁদের হূদয়ের গভীরে যে এ দুটো প্রাণীর জন্য বেদনাবোধের সঞ্চার হয়েছে তা পাঠক চেতনাকেও কিছুটা আর্দ্র করে তোলে। এখানেই গল্প ও উদ্দীপকের মূল আকর্ষণ। অতএব, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যে যথার্থ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সৃজনশীল প্রশ্নের চারটি উপাংশের উত্তর লিখনের নির্দেশনা এবং নমুনা উত্তর দেখে বলা যায়—পাঠ্যবইয়ের সংশ্লিষ্ট অংশ মনে রাখলে এবং বুঝতে পারলে ক ও খ অংশের উত্তর লেখা সম্ভব। গ এবং ঘ অংশের উত্তর লেখার জন্য শিক্ষার্থীদের উদ্দীপকের সাহায্য নিয়ে খুঁজে বের করতে হয়, তাতে পাঠ্যবইয়ের কোন ঘটনা ধারণা, নিয়ম, বিধি, সূত্র বা তত্ত্বের প্রতিফলন ঘটেছে। এরপর পাঠ্যবইয়ের ধারণার আলোকে শিক্ষার্থীকে নিজের প্রজ্ঞা ও মেধা খাটিয়ে উত্তর লিখতে হয়। বলা যায়, সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে ভালো ফলাফল অর্জনে পাঠ্যবই হবে শিক্ষার্থীর প্রধান অবলম্বন।
কন্ট্রোলার অব পাবলিকেশন্স, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড
No comments:
Post a Comment